কলাপাড়া উপজেলা রাখাইন সম্প্রদায়ের পরিচিতিঃ
আরাকানের বৌদ্ধ রাখাইন সম্প্রদয়ের কিছুলোক ভাগ্যান্বেষণের জন্য এ উপজেলার খেপুপাড়া ও কুয়াকাটায় বসতি স্থাপন করে। কথিত আছে, রাখাইনরা এখানে এসে পানীয় জলের সন্ধানে কুপ খনন করে যে স্থানে বিশুদ্ধ ও সুস্বাধু মিঠা পানির সন্ধান পায় এবং সেখানেই তারা বসতি করে। রাখাইন ভাষায় ‘ক্যানসাই’। শব্দের অর্থ ভাগ্যকূল। ভাগ্যহত রাখাইনরা এখানে ভাগ্যকূলের সন্ধান পায় বলে তাদের ভাষায় এ স্থানের নামকরণ করা হয় ‘ক্যানসাই’। পরবর্তী সময়ে রাখাইনদের খনিত কূয়া অনুসারে এ স্থানের নাম করণ করা হয় কুয়াকাটা। উপজেলার নাম কলাপাড়া হলেও উপজেলা সদর খেপুপাড়া নামে পরিচিত। কখিত আছে যে, উপজেলার মধ্য দিয়ে উত্তর দক্ষিনে প্রবাহিত একটি খালের দুই পাড়ে দু’জন প্রভাবশালী রাখাইন বাস করত; পূর্ব পাড়ে কলাউ মগ এবং পশ্চিম পাড়ে খেপু মগ। কলাউ মগের নামানুসারে পূর্ব পাড়ের বসতির নামকরণ হয় কলাপাড়া এবং খেপু মগের নামে পশ্চিম পাড়ের গ্রামের নাম হয় খেপুপাড়া।
কলাপাড়ার আদি বাসিন্দা রাখাইন সম্প্রদায়। রাখাইনদের এখানে আগমনের সংগে জড়িয়ে রয়েছে বিষাদময় ইতিহাস। ১৭৮৪ সাল পর্যমত আরাকান ছিল স্বাধীন রাজ্য। তখন বর্মী রাজা বোদোপায়া স্বাধীন আরাকান দখল করে নেয়। আরাকানের শেষ রাজা মহাথামাদা ও রাজ বংশীয় সবাইকে হত্যা করে বর্মী সেনাপতি মহাবেঙ্গুলের বাহিনী। তারা কয়েক লাখ রাখাইনকে হত্যা করে। এরপরও ক্ষামত না হয়ে যখন সত্রী লোকদের ঘরে বন্দী করে পাঠাতে শুরু করে বার্মায়। বর্মী বাহিনী নিশ্চিহ্ন করে দিতে থাকে রাখাইনদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সবকিছু। এদের বর্বরতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই রাখাইনরা পাড়ি জমায় বাংলাদেশের রামু ও টেকনাফ। তেমনি ১৭৯৪ সালে আরাকানের বেমব্রে( মং অং সেনডোয়ে, কাউফ্র অঞ্চল থেকে তেমেনগ্রী জেনারেল) পোঅংউ গোম্বগ্রী ও উসংক্যো চৌধুরীর নেতৃত্বে দেড়শো্ রাখাইন পরিবার গলাচিপার রাঙ্গাবালি, মৌডুবি, কলাপাড়ার বালিয়াতলী ও কুয়াকাটায় এবং তালতলীর জন মানবহীন দ্বীপাঞ্চলে এসে পৌছায় এবং আস্তে আস্তে জনবসতি শুরু করে। পরবর্তীতে ঝড় জলোচছাস সহ নানা প্রতিকুল পরিবেশের কারনে রাখাইন সম্প্রদায় আজ পরিনত হয়েছে দুর্বল জাতিতে । তবে এখনও তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এতদাঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়। আতিথিয়তায় তাদের নিজস্ব তৈরি বিভিন্ন পিঠা, বিন্নি ভাত ও নবান্ন অনুষ্ঠানের চিড়া খুবই মুখরোচক। তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেরও রয়েছে আলাদা বৈচিত্র ও ব্যাপক জনপ্রিয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস